For You!

R.N.Tagore's Poems:
Edited & Published By- Abdul Monnaf Pramanik
তোমার প্রতি
উচ্চারনের সময় "ৎ" চিহ্নীত স্থানে খন্ডেরত ধরে উচ্চারন করতে হবে।
মিছে তর্ক- থাক তবে থাক,
কেন কাঁদি বুঝিতে পার না ?
তর্কতে বুজিবে তাকি ?    এই মুছিলাম আঁখি,
এ শুধু চোক্ষের জল, এ নহে ভৎর্সনা॥

আমি কি চেয়েছি পায়ে ধরে
ওই তব আঁখি তুলে চাওয়া,
ওই কথা, ওই হাঁসি,    ওই কাছে আসা-আসি,
অলক ধুলায়ে দিয়ে হেসে চলে যাওয়া ?।

কেন আন বসন্তনিশীতে
আঁকি ভরা আবেশ বিহবল
যদে বসন্তের শেষে     শ্রান্তমনে ম্লান হেসে
কাতরে খুঁজিতে হয় বেদায়ের চল ?।

আজি যেন সোনার খাঁচায়
একখানি পোষ-মানা প্রান।
এও কি বুঝিতে হয়--    প্রেম যদি নাহি রয়
হাসিয়ে সোহাগ করা শুধু অপমান॥

মনে আছে,সেই একদিন
প্রথম প্রণয় সে তখন।
বিমল শরৎকাল,    শুভ্র ক্ষীন মেঘজাল,
মৃদু শীত বায়ে স্নিগ্ধ রবির কিরন॥

কাননে ফুটিত শেফালিকা,
ফুলে ছেয়ে যেত তরুমূল--
পরিপূর্ন্য সুরখনী,    কুলুকুলু ধ্বনি শুনি--
পরপারে বনশ্রেনী কুয়াশা আকুল॥

আমা-পানে চাহিয়ে তোমার
আঁকিতে কাঁপিত প্রানখানি।
আনন্দে-বিষাদে মেষা     সেই নয়নীর নেশা
তুমি তো জান না তাহা, আমি তাহা জানি॥

সে কি মনে পরিবে তোমার--
সহস্র লোকের মাঝখানে
যেমনি দেখিতে মোরে     কোন আকর্ষনডোরে
আপনি আসিতে কাছে জ্ঞানে কি অজ্ঞানে॥

ক্ষনিক বিরহ-অবসানে
নিবিড় মিলন ব্যাকুলতা--
মাঝে মাঝে সব ফেলি     রহিতে নয়ন মেলি,
আঁখিতে শুনিতে যেন হৃদয়ের কথা॥

কোন কথা না রহিলে তবু
শুধাইতে নিকটে আসিয়া।
নীরবে চরন ফেলে     চুপিচুপি কাছে এলে
কেমনে জানিতে পেতে, ফিরিতে হাসিয়া॥

আজ তুমি দেখেও দেখনা
সব কথা শুনিতে না পাও।
কাছে আস আশা ক'রে    আজি সারা দিন ধরে,
আন মনে পাস দিয়ে তুমি চলে যাও॥

দীপ জ্বেলে দীর্ঘ ছায়া লয়ে
বসে আছি সন্ধ্যায় আমি একা,
হয়তো বা কাছে এস    হয়তো বা দূরে বস,
সে-সকলেই ইচ্ছাহীন দৈবের ঘটনা॥

এখন হয়েছে বহু কাজ,
সতত রয়েছ অন্যমনে।
সর্বত্র ছিলাম আমি,    এখন এসেছি নামি--
হৃদয়ের প্রান্তদেশে, ক্ষদ্র গৃহকোনে॥

দিয়েছিলে হৃদয় যখন
পেয়েছিলে প্রানমন দেহ।
আজ সে হৃদয় নাই,     যতই সোহাগ পাই
শুধু তাই অবিশ্বাস বিষাদ সন্দেহ॥

জীবনের বসন্তে যাহারে
ভালোবেসেছিলে একদিন
হায় কী কুগ্রহ,     আজ তারে অনুগ্রহ !
মিষ্ট কথা দিবে তারে গুটিদুই-তিন॥

অপবিত্র ও করপরশ
সঙ্গে ওর হৃদয় নহিলে।
মনে কি করেছ, বঁধু,    ও হাসি এতই মধু
প্রেম না দিলেও চলে শুধু হাসি দিলে॥

তুমিই তো দেখালে আমায়
( স্বপ্নেও ছিল না এত আশা )
প্রেম দেয় কতখানি--    কোন হাসি, কোন বানী,
হৃদয় বাসিতে পারে কত ভালোবাসা॥

তোমার সে ভালোবাসা দিয়ে
বুজেছি আজি এ ভালোবাসা--
আজি এই দৃষ্টি, হাসি,    এ আদর রাশি রাশি,
এই দুরে ছলে যাওয়া, এই কাছে আসা॥

বুক ফেটে কেন অশ্রু পড়ে
তবুও কি বুঝিতে পার না ?
তর্কেতে বুঝিবে তা কি ?    এই মুছুলাম আঁখি--
এ শুধু চোক্ষের জল, এ নহে ভৎসনা॥

*****

দুই
উচ্চারনের সময় "ৎ" চিহ্নীত স্থানে খন্ডেরত ধরে উচ্চারন করতে হবে।
        
হায় রে নির্বোধ প্রিয়া         কোথা তোর আছে হিয়া,
কোথা তোর মন।
শুধু ওইটুকু          আতিশয় ক্ষুদ্র বুক
ভয়ে কম্পমান।
উর্ধে ওই দেখ চেয়ে          সমস্থ আকাশ ছেয়ে
অনন্তের দেশে--
সে যখন এক ধারে          লুখিবে তারে--
পারি কি উদ্দেশ্য ?।



ওই হেরো সীমাহারা        গগনেতে গ্রহ-তারা--
অসংখ্য জগৎ,
ওরেই মাঝে পরিভ্রান্ত        হয়তো আমি একা পান্থ
খুজিতেছি পথ।
ওই দুর-দরান্তরে        অজ্ঞাত ভুবন-পারে
কভু কোনখানে
আর কি গো দেখা হবে ?       আর কি গো কথা হবে ?
কভু নাহি জানে॥



যা হবার হাই হোক,       ঘুচে য়াক সর্ব শোক
সর্ব মরিচিকা।
নিবে যাক চিরদিন        পরিশ্রান্ত পরিক্ষীন
মর্তজন্মশিখা।
সব তর্ক হোক শেষ--       সব রাগ, সব দ্বেষ,
সকল বালাই।
বলো শান্তি, বলো শান্তি,      দেহ-সাথে সব ক্লান্তি
পুড়ে হোক ছাই॥



*****
তিন


উচ্চারনের সময় "ৎ" চিহ্নীত স্থানে খন্ডেরত ধরে উচ্চারন করতে হবে।
চিরকাল রবে মোর প্রেমের কাঙ্গাল,
এ কথা বলিতে চাও বল।
ক্ষনটুকু হোক সেই চিরকাল--
তার পরে যদি তুমি ভোল
মনে করব না আমি শপথ তোমার,
আসা য়াওয়া দুদিকেই খোলা রবে দ্বার--
যাবার সময় হলে যেয়ো সহজেই,
তবু ভালোবাস যদি বেসো॥



বন্ধু তোমার পথ সম্মুখে জানি,
পশ্চাতে আমি আছি বাঁধা।
অশ্রুনয়নে বৃথা শিরে কর হানি
য়াত্রায় নাহি দিব বাঁধা।
আমি তব জীবনের লক্ষ্য তো নহি,
ভুলিতে ভুলিতেযাবে হে চিরবিরহী,
তোমার যা দান তাহা রহিবে নবীন
আমার স্মৃতির আঁখি জলে--
আমার যা দান সেও যেন চিরদিন
রবে তব বিস্মৃতি তলে॥

দূরে চলে যেতে যেতে দ্বিধা করি মনে
যদি কভু চেয়ে দেখ ফিরে,
হয়তো দেখিবে আমি শুন্য শয়নে--
নয়ন সিক্ত আঁখিনীরে।
মার্জনা কর যদি পাব তবে বল
করুনা করিলে নাহি খোচে আঁখিজল--
সত্য যা দিয়েছিলে থাক মোর তাই,
দিবে লাজ তার বেশী দিলে।
দূঃখ বাচাতে যদি কোনমতে চাই
দূঃখের মূল্য না মিলে॥



দূর্বল ম্লান করে নিজ অধিকার
বরমাল্যের অপমান।
যে পারে সহজে নিতে যোগ্য সে তার,
চেয়ে নিতে সে কভু না জানে।
প্রেমের বাড়াতে গিয়ে মিশাব না ফাঁকি,
সীমারে মানিয়া তার মর্যাদা রাখি--
যা পেয়েছি সেই মোর অক্ষয় ধন,
যা পাই নাই বড়ো সেই নয়।
চিত্ত ভরিয়া রবে ক্ষনিক মিলন
চিরবিচ্ছেদ করি জয়॥

*****
চার


উচ্চারনের সময় "ৎ" চিহ্নীত স্থানে খন্ডেরত ধরে উচ্চারন করতে হবে।
যে দিন প্রথম দেখিনু
সে তখন প্রথম যৌবন।
প্রথম জীবন পথে        বাহিরিয়া এ জগতে
কেমনে বাঁধিয়া গেল নয়নে নয়ন॥



তখন উষার আধো আলো
পড়েছিল মুখে দুজনার--
তখন কে জানে কারে,         কে জানিত আপনারে
কে জানিত সংসারের বিচিত্র ব্যাপার॥



কে জানিত শ্রান্তি তৃপ্তি ভয়,
কে জানিত নৈরাশ্যয়াতনা,
কে জানিত শুধু ছায়া          যৌবনের মোহমায়া--
আপনার হৃদয়ের সহস্র ছলনা॥



আঁখি মেলি যারে ভালো লাগে
তাহারেই ভালো বলে জানি।
সব প্রেম প্রেম নয়            ছিল না তো সে সংশয়
যে আমারে কাছে টানে তারে কাছে টানি॥



অনন্ত বাসরসুখ যেন
নিত্য হাসি প্রকৃতি বঁধুর--
পুস্প যেন চিরপ্রান,         পাঁখীর অশ্রান্ত গান,
বিশ্ব করেছিল ভ্যন অনন্ত মধূর॥



সেই গানে, সেই ফুল্ল ফুলে,
সেই প্রাতে, প্রথম যৌবনে,
ভেবেছিনু এ হৃদয়         অনন্ত অমৃত-ময়
প্রেম চিরদিন রয় এ চিরজীবনে॥



তাই সেই আশার উল্লাসে
মুখ তুলে চেয়েছিনু মুখে।
সুধাপাত্র লয়ে হাতে          কিরনকিরীট সাথে
তরুন দেবতা সম দাড়ানু সম্মুখে॥



পত্র-পুস্প গ্রহ-তারা ভরা
নীলাম্বরে মগ্ন চরাচর,
তুমি তারে মাঝখানে          কী মূর্তি আখিলে প্রানে-
কী ললাট, কী নয়ন, কী শান্ত অধর॥



সুগভীর কল ধ্বনিময়
এ বিশ্বের রহস্য অকুল,
মাঝে টুমি শতদল          ফুটিছিলে ঢলঢল--
তীরে আমি দাঁড়াইয়া সৌরভে আকুল॥



পরিপূর্ন্য পূর্নিমার মাঝে
উধব মূখে চকোর যেমন
আকাশের ধারেযায়,        ছিড়িয়া দেখিতে চায়
অগাধ স্বপ্নছাওয়া জ্যোৎস্না-আবরন॥



তেমনি সভয়ে প্রান মোর
তুলিতে যাইত কতবার
একান্ত নিকটে গিয়ে         সমস্ত হৃদয় দিয়ে
মধূর হাস্যময় সৌন্দর্য তোমার॥



হৃদয়ের কাছাকাচি সেই
প্রেমের প্রথম আনাগোনা--
সেই হাতে হাতে ঠেকা       সেই আধো চোখে দেখা,
চুপি চুপি প্রানের প্রথম জানাশোনা॥



অজানিত সকলেই নুতুন--
অবশ চয়ন টলমল--
কোথা পথ কোথা নাই,       কোথা যেতে কোথা য়াই,
কোথা হতে উঠে হাসি কোতা অশ্রুজল॥



অতৃপ্ত বাসনা প্রানে লয়ে
অবারিত প্রেমের ভবনে
যাহা পাই তাই হুলি,         খেলাই আপনা ভুলি,
কী যে রাখি কী যে ফেলি বুঝিতে পারি নে॥



ক্রমে আসে আনন্দ-আলস--
কুসুমিত ছায়া তরুতলে
জাগাই সরসীজল,        ছিড়ি ব'সে ফুলদল,
ধুলি সও ভালো লাগে খেলাবার ছলে॥



অবশেষে সন্ধ্যা হয়ে আসে,
শ্রান্তি আসে হৃদয় ব্যাপিয়া--
থেকে থেকে সন্ধ্যাবায়           করে ওঠে হায় হায়,
অরন্য মর্মরি ওঠে কাঁপিয়া কাঁপিয়া॥



মনে হয়, এ কি সব ফাঁকি !
এই বুঝি, আর কিছু নাই !
অথবা যে রত্ন তরে          এসেছিনু আশা করে
অনেক লইতে গিয়ে হারাইনু তাই॥



সুখের কাননতলে বসি
হৃদয়ের মাজারে বেদনা--
নিরখি কোলের কাছে      মৃৎপিন্ড পড়িয়া আছে,
দেবতারে ভেঙ্গে ভেঙ্গে করেছি খেলনা॥



এরেই মাজে ক্লান্তি কেন আসে !
উঠিবারে করি প্রানপন--
হাসিতে আসে না হাসি,       বাজাতে বাজে না বাঁশি,
শরমে তুলিতে নারি নয়নে নয়ন॥



কেন তুমি মূর্তি হয়ে এলে,
রহিলে না ধ্যানধারনায়।
সেই মায়া-উপবন          কোথা হল অদর্শন--
কেন হায় ঝাঁপ দিতে শুকালো সাগর ?



স্বপ্ন রাজ্য ছিল ও হৃদয়--
প্রবেশিয়া দেখিনু সেখানে
এই দিবা, এই নিশা,         এই ক্ষুধা, এই তৃষা,
প্রান পাঁখি কাঁদে এই বাসনার টানে॥



আমি চাই তোমারে যেমন
তুমি চাও তেমনি আমায়--
কৃতার্ত হইব আসে          গেলেম তোমার পাশে,
তুমি এসে বসে আছ আমার দুয়ারে॥



সৌন্দর্য সম্পদ মাঝে বসি
কে জানিত কাঁদিছে বাসনা !
ভিক্ষা ভিক্ষা সব ঠাঁই--          তবে আর কোথা যাই
ভিখারি হল যদি কমল-আসনা॥



তাই আর পারি না সঁপিতে
সমস্ত এ বাহির অন্তর।
এ জগতে তোমা ছাড়া            ছিল না তোমার যাড়া,
তোমারে ছেড়েও আজ আছে চরাচর॥



কখন বা চাঁদের আলোতে
কখন বা বসন্ত সমীরনে
সেই ত্রিঋূবন জয়ী           অপার রহস্যময়ী
আনন্দ মূর্তিখানি জেগে ওঠে মনে॥



কাছে যাই তেমনি হাসিয়া
নবীন যৌবনময় প্রানে--
কেন হেরী অশ্রুজল,          হৃদয়ের হলাহল,
রুপ কেন রাহুগ্রস্ত মানে অভিমানে॥



প্রান দিয়ে সেই দেবী পূজা
চেয়ো না, চেয়ো না তবে আর।
এস থাকি দু'জনে         সুখে দুঃখে গৃহকোনে,
দেবতার তরে থাক পুস্প-অর্ঘ ভার॥
*****